দখিনের খবর ডেক্স ॥ গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে তদন্ত এবং মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনার উপায় উল্লেখ করে করে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি-র কাছে একটি পর্যবেক্ষণ জমা দিয়েছেন বাংলাদেশের ২৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক। খবর বিবিসির।
আইসিসি এর আগে এ ধরনের একটি পর্যবেক্ষণ পেশ করার জন্য এদেরকে অনুমতি দিয়েছিল, এরপরই গত ১৮ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই ২৬ জন নাগরিকের পক্ষে দুজন এই পর্যবেক্ষণ জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের (সিপিজে) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ও সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান আইসিসির এ বিষয়ক অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে গত ১৮ জুন আইসিসিতে ৪০ পৃষ্ঠার বিবরণসহ পর্যবেক্ষণ জমা দেন। মিয়ানমার যেখানে আইসিসি’র সদস্য নয়, সেখানে কীভাবে তাদের এধরনের একটি অপরাধের জন্য তদন্ত ও বিচারের মুখোমুখি করা যাবে, তারই আইনগত ভিত্তি তুলে ধরা হয়েছে এই পর্যবেক্ষণে। লন্ডনের মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনজিদা আহমেদ বলেন, পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়েছে কোন কোন অপরাধগুলো আইসিসি চাইলে আমলে নিতে পারে। এই গবেষক বলেন, ‘পর্যবেক্ষণে যা যা দেখানো হয়েছে তার মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক অপরাধ, নিপীড়ন ও গণহত্যা আছে।’ মনজিদা আহমেদ এই পর্যবেক্ষণটিতে আইসিসির কাছে যে আইনি মতামত তুলে ধরা হয়েছে, তার খসড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মিয়ানমার যেখানে আইসিসি’র সদস্য নয় সেখানে কি করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অপরাধগুলো শুরু হযয়েছে মিয়ানমারে কিন্তু শেষ হয়েছে বাংলাদেশে। সেটাকে তুলে ধরা হয়েছে যে বাংলাদেশ চাইলে এটা রেফার করতে পারে। কিন্তু আইসিসি এই পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেবে- তার সম্ভাবনা কতটুকু? জবাবে মনজিদা আহমেদ বলেন, এখানে অপরাধের যে প্রকৃতি সেগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে অপরাধগুলো প্রকাশ্যে হয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের উদ্যোগ আইসিসি আমলে নেয়ার নজির আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতকে কিছু জিনিস দেখিয়ে দিচ্ছি। প্রসিকিউটরই উদ্যোগ নিয়েছে।’
জানা গেছে, নাগরিকদের তরফ থেকে দেয়াা পর্যবেক্ষণে তিনটি বিষয়ে ওপর মতামত দেয়াা হয়েছে- এগুলো রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপট ও এর পরের অবস্থা, মিয়াানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন ও সংঘটিত অপরাধ ও বাংলাদেশের আইন কী বলছে। এ পর্যবেক্ষণে বিশেষ করে গত বছরের আগস্টের পর আসা রোহিঙ্গাদের জবানবন্দি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞই তুলে ধরা হয়েছে আইসিসিরি কাছে। এর মধ্যে আইসিসি বাংলাদেশ সরকারের কাছেও তাদের মতামত চেয়েছে এবং বাংলাদেশের তরফ থেকে মতামত পাঠিয়ে দেয়াা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
Leave a Reply